Saturday, October 29, 2016

'খুন করে ওর হাতের আঙুলগুলো কেটে নেই, যা দিয়ে সে আমার কুমারিত্ব নষ্ট করেছিল'


এটা আমালের গল্প। আমাল গত বছর একটি লোককে খুন করে এখন কারাগারে আছে। লোকটি তাকে প্রথমে ধর্ষণ করেছে, তারপর তার নগ্ন ছবি তুলে দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেছে, অর্থ আদায় করেছে এবং নানারকম দাবি পূরণ করতে বাধ্য করেছে।এক পর্যায়ে সে আমালের বোনকেও ধর্ষণ করতে চাইলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে আমাল। আমাল তার ছদ্মনাম। বিবিসি’র শেম বা ‘লজ্জা’ নামক এক ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে তুলে আনা হয়েছে আমালের এই গল্প।
কম বয়েসী মেয়েদের বা মহিলাদের ব্যক্তিগত নগ্ন ছবি অথবা যৌন নিপীড়নের সময় তোলা ছবি তুলে তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করার কিংবা অসম্মানিত করার যে প্রবণতা আজকাল ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা নিয়েই এই ‘লজ্জা’ ধারাবাহিক।
তিউনিসিয়ার এক গ্রামে বাস করত আমালদের পরিবার। আমালের কাজ ছিল, গরুগুলোর দেখভাল করা, তাদের জন্য ঘাস কাটা আর জলপাই কুড়নো। লোকটি আমালদের বাড়িতে বেড়াতে আসত। সে ছিল তার বাবার বন্ধু। আমাল অবশ্য তাকে ভাল চিনত না। ‘তার চাচা আর আমার চাচা ছিলেন চাচাতো ভাই। তাদের দু’জনার মধ্যে জমিজমা নিয়ে গণ্ডগোল ছিল।’
‘একদিন সে আমাদের বাড়িতে আসে। বাড়িতে কেউ ছিল না। সে আমাকে প্রথমে আজেবাজে কথা বলে। সে আমাকে তার আঙুল দিয়ে দিয়ে ধর্ষণ করে। তারপর সে আমার মুখে থুতু ছুড়ে মারে। সে আমাকে বলে, তোমার যদি নিজের মানইজ্জত খোয়ানোর ইচ্ছে জাগে, তাহলে এসব কথা সবাইকে বলে দিও’, বলছিল আমাল।
লজ্জায় এসব কথা কাউকে বলা হয় না আমালের। তারপর তাকে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণ করতে থাকে লোকটি। দুই সপ্তাহ পর সে তার মোবাইলের ক্যামেরায় আমালের নগ্ন ছবি তোলে। ‘সে আমাকে ছবিগুলো দেখায়। পুরোপুরি নগ্ন ছবি। সে আমাকে বলে, এগুলো আমি তোমার দাদীকে দেখাব। সে কিছু বলবে না, কিন্তু ক্ষোভে-দুঃখে সে মারা যাবে। এগুলো আমি তোমার বাবাকে দেখাব, যে তোমাকে পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে ভালবাসে। কিন্তু তুমি আমাকে যদি টাকা দাও, তাহলে এগুলো কাউকে দেখাব না।’
এরপর আমাল তাকে টাকা দিতে শুরু করে। এজন্য তাকে গাভীর দুধ চুরি করতে হত। এমনকি বাবার পকেট থেকে একদিন ১৭শ’ দিনারও চুরি করে আমাল। ‘সে আমাকে পেটাত। সে আমার সঙ্গে সব কিছু করত। কিন্তু আমি কাউকে কিছু বলতে পারতাম না।’
‘আমি পালিয়ে যেতে চাইতাম। কিন্তু কোথায় পালাব আমি? আমাকে কে মেনে নেবে? আমি এমনকি বিষ খেয়েও মরতে চেয়েছি।’ রোজার মাসের এক সপ্তাহ পরে একদিন লোকটি আমালের কাছে তার চাচাত বোনের মোবাইল নাম্বার চায়। আমাল তাকে নাম্বারটি দেয়।
‘আমি ছিলাম দড়ি দিয়ে বাধা একটি অক্ষম পশুর মত। সে আমাকে যা বলত, তাই আমাকে করতে হত।’ পরে অবশ্য আমাল তার চাচাতো বোনকে সবকিছু জানিয়ে দেয়। সে তাকে ওই লোকটি থেকে দূরে থাকতে বলে।
কিন্তু নাছোড়বান্দা লোকটি দিনের পর দিন আমালের কাছে তার ১৯ বছর বয়েসী বোনের খবর জানতে চায়। আমাল তাকে বলে, ‘আমার বোন যদি একটি পতিতাও হত, তাতেও আমি তোমাকে তার কাছে ভিড়তে দিতাম না।’
জবাবে লোকটি বলত, ‘তুমি পছন্দ কর আর না কর, এটা হবেই। প্রয়োজন হলে জোর করে হবে।’ তখন আমাল একদিন তার বোনকে গিয়ে বলে, ‘চল তাকে খুন করি।’ বৃহস্পতিবার রাতে আমালের বাড়িতে আসে তার চাচাতো বোন। এর কিছুক্ষণ পর লোকটি আসে। লোকটির ইচ্ছে দুই বোনের সঙ্গে একসঙ্গে, এক বিছানায় যৌনকর্ম করার।
‘আমি তাকে বলি, চল এটা এখানেই শেষ করি। আমার সঙ্গে তুমি যা করেছ তার সবই ক্ষমা করে দিচ্ছি আমি। তোমাকে যে টাকা দিয়েছি তাও মাফ করে দিচ্ছি। তোমাকে দেবার আর কিছুই আমার নেই।’
তখন লোকটি জবাব দেয়, ‘তোমার কাছে যদি আর টাকা না থাকে তাহলে আমার বন্ধুদের হাতে তুলে দেব তোমাকে।’ ‘তখন আমার মাথায় খুন চাপে’, বলছিল আমাল। লোকটি রান্নাঘরের সামনে বসেছিল। আমাল মাংস কাটার চাপাতি তুলে নেয় এবং লোকটির পেছনে গিয়ে তার মাথায় উপর্যুপুরি আঘাত করতে শুরু করে।
‘কুপিয়ে তার শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলি আমি। তারপর তার হাতের আঙুলগুলো কেটে নেই, যা দিয়ে সে আমার কুমারিত্ব নষ্ট করেছিল।’
‘এখন আমার আর কিছুই চাইবার নেই, শুধু আল্লাহর সাহায্য চাই আর আমার পিতা যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন।’ আমালের বাবা তাকে বলেছে, ‘তুমি যদি জেল থেকে বেরিয়েও আস, তবু তোমাকে মেনে নেব না আমি। তুমি আমাকে লজ্জিত করেছ।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা

No comments:

Post a Comment